রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ নুরুল হাসান সোহান প্রথম অধিনায়ক হিসেবে যাত্রার প্রথম ম্যাচেই টস হেরেছেন। আর টস জয়ের পর দারুণ ব্যাটিং উইকেটে আগে ব্যাট হাতে নেয় জিম্বাবুইয়ে। সোহান ইনিংসের শুরুটা করান তাসকিন আহমেদকে দিয়ে, প্রথম ওভারে তিনি দেন ৮ রান। এরপর দ্বিতীয় ওভার করতে এসে নাসুম ৪ রানের বেশি দেননি। পরের ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তারপর বাংলাদেশের বোলারদের উল্টাপাল্টা বোলিংয়ের সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান। একের পর এক আসছে বাউন্ডারি। ক্রিজে গিয়েই বোলারদের উপর চড়াও হয়েছেন সিকান্দার রাজা। নিজের মতো করে খেলে যাচ্ছেন ওয়েসলি মাধেভেরে। তাসকিন আহমেদকে চার মেরে ৩৭ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন মাধেভেরে। তার ব্যাট থেকে ছয়টি চার।
হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে সফরকারীদের সামনে ২০৬ রানের লক্ষ্য দেয় জিম্বাবুয়ে। ২০ ওভারে জবাব দিতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি সফরকারীদের। ৮ বলে মাত্র ৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান উদ্বোধনী ব্যাটার মুনিম শাহরিয়ার। মাসাদকাদজার বলে থার্ড ম্যানে দাঁড়িয়ে থাকা চিবাবার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন তিনি।
কিন্তু এরপর অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ও ওয়ানডাউনে নামা ওয়েসলি মাধেভেরে দারুণ খেলেছেন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে দলীয় ৪৩ রান পায় তারা। সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই আরভিনকে (১৮ বলে ২১) সাজঘরে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন। কিন্তু তারপর মাধেভেরে, শন উইলিয়ামসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৭ বলে ৫৬ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি এবং মাধেভেরে ও সিকান্দারের ৪৩ বলে ৯১ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহ পায় জিম্বাবুইয়ে।
মাধেভেরে ক্যারিয়ারের সপ্তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪৬ বলে ৯ চারে ৬৭ রান করার পর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ইনিংস শেষ হওয়ার মাত্র ৩ বল আগে মাঠ ছাড়েন। আর সিকান্দার ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক ২৩ বলে হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২৬ বলে ৭ চার, ৪ ছয়ে ৬৫ রানে। উইলিয়ামস করেন ১৯ বলে ৪ চার, ১ ছয়ে ৩৩ রান করেন। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০৫ রান করে জিম্বাবুইয়ে।
৩ পেসার মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ৫০, শরিফুল ইসলাম ৪ ওভারে ৪৫, তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ৪২ এবং বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়েছেন। গত বছর একই ভেন্যুতে পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়ে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন। তাকে এদিন ছুঁয়েছেন মুস্তাফিজ, বিনিময়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি সংগ্রহ পেয়েছে জিম্বাবুইয়ে। শেষ ৫ ওভারেই ৭৭ রান তুলেছে তারা বাংলাদেশী বোলারদের অগোছালো বোলিংয়ে।
রানপাহাড়ের নিচেই চাপা পড়েছিল বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমানদের তুলোধোনা করে বড় সংগ্রহ গড়েছিল জিম্বাবুয়ে।
জবাব দিতে নেমে শুরুটা ছন্দের হয়নি। তাতে পরের আপ্রাণ চেষ্টাও কাজে আসেনি। সঙ্গী হয়েছে হারের স্বাদ।
এরপর এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়েন লিটন দাস। দারুণ ছন্দে থাকা লিটন আউট হন অদ্ভূতভাবে। শর্ট ফাইন লেগে তার ক্যাচ ছাড়েন এনগ্রাবা, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বল ছুঁড়েন নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়ানো বোলার শেন উইলিয়ামসকে। লিটন তখন ছিলেন মাঝ ক্রিজে। রান আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে। এর আগে ৬ চারে ১৯ বলে ৩২ রান করেন লিটন।
দেখেশুনে খেলা এনামুল হক বিজয়ও সুবিধা করতে পারেনি। ২ ছক্কার পর ২৭ বল খেলে কেবল ২৬ রান করেন তিনি। এছাড়া ২৫ বলে ৩৭ রান আসে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে।
দীর্ঘদিন পর ফিরে দারুণ খেলছিলেন শান্ত। আগের ৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাত্র ৭৬ রান করা এ বাঁহাতি এদিন ২৫ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ৩৭ রান করে ফিরে গেছেন। তবে পঞ্চম উইকেটে সোহানের সঙ্গে ২১ বলে ৪০ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে মূল লড়াইটা করেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ২৬ বলে ৪২ রান করেন তিনি। কিন্তু তার ওই চেষ্টা কোনো কাজে আসেনি। জিম্বাবুয়ের পক্ষে ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট পেয়েছেন লুক জঙ্গে।
এই পেসারের ফুল লেন্থের বল তুলে মারতে গিয়ে ঠিকভাবে ব্যাটে লাগাতে পারেননি চাকাভা। ১১ বলে ৮ রান করে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। এরপর ওয়েসলি মাদাভিরার সঙ্গে অধিনায়ক ক্রেইগ আরবিনের জুটি জমে উঠতে দেননি মোসাদ্দেক হোসেন।
তার হঠাৎ নিচু হওয়া বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান আরবিন। ২ চারে ১৮ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। কিন্তু এরপরই যেন ধীরে ধীরে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন জি¤॥^াবুয়ের ব্যাটাররা।
মাদাভিরার সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়েন শেন উইলিয়ামস। এরপর বাংলাদেশকে ফের স্বস্তি এনে দেন মোস্তাফিজ। তার সেøায়ার বুঝতে না পেরে ব্যাটে লেগে বোল্ড হন উইলিয়ামস। কিন্তু এটাই যেন শাপেবর হয় জিম্বাবুয়ের জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ২০৫/৩ (চাকাভা ৮, আরভিন ২১, মাধেভেরে ৬৭ (আহত অবসর), উইলিয়ামস ৩৩, রাজা ৬৫*, বার্ল ০*; তাসকিন ৪-০-৪২-০, নাসুম ৪-০-৩৮-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৫০-২, মোসাদ্দেক ৩-০-২১-১, শরিফুল ৪-০-৪৫-০, আফিফ ১-০-৬-০)
বাংলাদেশ ॥ ২০ ওভারে ১৮৮/৬ (মুনিম ৪, লিটন ৩২, এনামুল ২৬, শান্ত ৩৭, আফিফ ১০, সোহান ৪২*, মোসাদ্দেক ১৩, নাসুম ০*; এনগারাভা ৪-০-৪৩-১. মাসাকাদজা ৩-০-২৩-১, চিভাঙ্গা ৩-০-২৮-০, উইলিয়ামস ২-০-৭-০, রাজা ৩-০-৩০-১, জঙ্গুয়ে ৪-০-৩৪-২, মাধেভেরে ১-০-১২-০)
ফল ॥ জিম্বাবুইয়ে ১৭ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা ॥ সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুইয়ে)।
সিরিজসেরা ॥ ৩ ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুইয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।